সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আসুন খাদে নামি

শচীন তেন্ডুলকার কে আপনারা সকলেই চেনেন। অনেকেই এটাও জানেন যে একদিনের ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরীটি পেতে শচীনকে ৭৯ টি ম্যাচ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। না, এটা ক্রিকেট বা শচীনকে নিয়ে কোনো লেখা নয়। এটা খাদ নিয়েই।

কৌশিক গাঙ্গুলীকে চিনি বহু আগে থেকে যখন তিনি টেলিফিল্ম বানাতেন, সেই সময় থেকেই। এই রে, চিনি বলতে আপনি আবার এটা ভেবে বসবেন না যেন যে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। মোটেই তা নয়। চিনি মানে তার নাম জানি, তার ছবি দেখেছি। সত্যি বলছি অখাদ্য। পাতে দেওয়া যায় না। দুর্বল গল্প। দুর্বল চিত্রনাট্য। দুর্বল মেকিং।

কৌশিক গাঙ্গুলীর একটি ছবির নাম করছি। 'শূন্য এ বুকে'। হল থেকে বেরিয়ে এসে মাথা ঝিমঝিম করছিল। 'জ্যাকপট' , মানসিক অত্যাচার বললেও কম বলা হয়। 'ব্রেকফেল' ঠিকঠাক লেগেছিল। Very Frankly Speaking শুধুমাত্র পরমব্রত , স্বস্তিকা আর অনু কাপুরের জন্য। গল্প মোটেই ভালো নয়। 'আরেকটি প্রেমের গল্প' আমি দেখিনি।



'রংমিলান্তি' দেখলাম। বিশ্বাস করুন। গল্প ভালো লাগেনি। অযৌক্তিক। কিন্তু মেকিংটা অসাধারণ লাগল। বাহ। তারপর পরপর দেখলাম C/O Sir, Laptop, শব্দ। ঠুকে ঠুকে খেলা লোকটা হঠাৎ তিনিতে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরী করে দিল। আমি তো পাগল হয়ে গেলাম। অপুর পাঁচালী দেখে আমি তো বাক্যহারা হয়েছিলাম। সীট ছেড়ে উঠতে পারিনি ১০ মিনিট। Laptop দেখে আমি অসুস্থ হয়ে গেছিলাম, কিছুতেই ঘোর কাটতে চাইত না। বেশ কিছু সিনেমায় ইতিমধ্যে লোকটির অভিনয় দেখে ফেলেছি। কলকাতায় এই মুহুর্তে কৌশিক গাঙ্গুলীর থেকে ভালো অভিনেতা নেই। আমি তো ভক্ত হয়ে গেলাম। হঠাৎ কি হল আপনার দাদা ??

আপনারা ভাবছেন, খাদ কোথায় ? আমি তো কৌশিক গাঙ্গুলীকে নিয়ে ফিরিস্তি গাইছি। আরে বাবা কে সি দাসের রসগোল্লা নিয়ে লিখতে বলা হলে আমি তো কে সি দাসকে নিয়েই আগে লিখব। রসগোল্লা নিয়ে আর নতুন কিই বা লেখার আছে, ওটা তো খাওয়ার জিনিস। আমি খাদে নেমে কি করব বলুন তো। খাদের চারপাশেই ঘোরাফেরা করি বরং।

সিনেমা শুরুই হচ্ছে বেশ কিছু এক শালিখ দেখিয়ে। আমি এই একটি ব্যাপারে বড্ড কুসংস্কারী। এক শালিখ সহ্য করতে পারি না। কিন্তু এই এক শালিখ তো আমি দেখছি না। দেখছে পর্দার মানুষ জন। কেউ একজন যখন দেশভাগের কথা বলে, ঠিক তার পরমুহুর্তেই পর্দায় ফুটে ওঠে একটি গাছের শাখা যার দুটি বৃন্তে এক গোঁছা ফুল ফুটে আছে। লিলি চক্রবর্ত্তী যখন সজ্জায় ব্যস্ত তখন আকুল নয়নে গার্গীর তাকিয়ে থাকার মধ্যে আপনি কি খুঁজে পাবেন সেটা আপনার নিজস্ব। চুপ থাকা মানুষটি যখন কথা বলে ওঠে কি বলে সেটা বুঝে নেওয়া আপনার দায়িত্ব।

কি অপুর্ব অর্থবহ দৃশ্য ভাবুন তো, জলাশয়ের মাঝে একটা পাথরের মাথা ভেসে রয়েছে, একটি নাম না জানা পাখি এদিক সেদিক করছে।

অতবড় দূর্ঘটনা হল, অথচ দেখুন কারো জামা কাপড় ছিড়ল না!! কারো জামায় ধূলোবালির দাগ নেই। আমি তো ভেবেছিলাম এত বড় ডিরেক্টরের কি করে এই সামান্য জিনিসগুলো নজর এড়িয়ে গেল?? ভুল তো আমার হয়েছিল, ভেঙ্গে গেল শেষে।

মৃত্যু তো অনিবার্য। মৃত্যুর পর জানি না কেউ কি আছে শেষে। কাকে কোথায় পৌঁছতে হবে তা কেউ জানে না। চলে যাওয়ার আগে মনের যা কিছু আবর্জনা, নোংরা খাদে ফেলে যাই। হালকা লাগবে। সত্যের চেয়ে সুন্দর তো আর কিছুই নেই।

দেখেছেন, আমি সিনেমা নিয়েই কিছুই বলতে পারলাম না। কি করে বলব বলুন তো? কষা মাংসের স্বাদ কি মুখে বলে বোঝানো যায়?? গোলাপ ফুলের গন্ধ!! অথবা এই যে আকাশ ঘিরে মেঘ করেছে, এ আমি কি করে আপনাকে শব্দে বোঝাবো?? চুমু খেতে কেমন লাগে সে কি খাতা কলমে বোঝানোর জিনিস !!!

যান , দেখে আসুন। পরিবারের সকলকে নিয়েই দেখে আসুন।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এরপরেও কি আপনি বলবেন 'গর্ভপাত নিপাত যাক !!!'

এতদিন গর্ভপাতকে আপনারা নিশ্চয় অন্যায় ভেবে এসেছেন?? সেটাই তো ভাবা উচিত?? আসুন এবার আমি আপনাকে একটু অন্যরকম ভাবে জিনিসটা দেখানোর চেষ্টা করি। লজিকটা বোঝার চেষ্টা করুন এবং যুক্তি নির্ভর বিরোধিতা করুন। বেকার নাকে কান্না কপচাবেন না প্লীজ। আসলে আপনারা বড় কুঁচুটে। সব সময় একপক্ষ বা এক দিক দেখেই বিচার করে ফেলেন। বড্ড বেশি ইমোশোনাল ফেকলু। একটু দুঃখু দেখলেই চোখ টশটশ করে। সবটাই ন্যাকামো বলছি না। কিন্তু যে পাপ নিজে দিনে সাঁইত্রিশ বার করেন সেটাই অন্য কেউ করলে আহা! কি নিষ্ঠুর বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। 'রাস্তায় মানুষটা পরে রয়েছে, আহা কেউ এসে একটু সাহায্য করছে না কেন' বলে টিভিতে বাইট দিতে পারেন কিন্তু নিজে এক পা নড়তে পারেন না। যাই হোক, মোদ্দা কথা হল, অনিচ্ছাকৃত শিশু গর্ভে এসে গেলে অনেকেই গর্ভপাত করে থাকেন। সোজা বাংলায় যাকে Abortion বলে। অনেককেই দেখেছি এই গর্ভপাত নিয়ে খুব আঁকু-পাকু করে থাকেন। বলা যায় না, কিছুদিন পর তারা এটাও বলতে পারেন, কনডোম পরে সেক্স করা মানে একটি 'প্রায় হয়ে যাওয়া শিশুর হত্যা' ইত্যাদি। যে শিশুকে বাবা-মা জন্ম দিতে চাইছে না, তাকে আইনের ভয় দেখিয়ে জন্ম দেওয়া ক

৫ হাজার টাকার কমেও আমরা বানিয়ে ফেলেছি ২৫ মিনিটের একটি আস্ত সিনেমা । অবিশ্বাস্য বইকি !!

যেখানে বড় বড় পরিচালকেরা কোটি কোটি টাকা ছাড়া কিছু ভাবতে পারছে না, সেখানে শুধু ইচ্ছাশক্তি সম্বল করে এবং মাত্র ৫ হাজার টাকার কমেও আমরা বানিয়ে ফেলেছি ২৫ মিনিটের একটি আস্ত সিনেমা। মাত্র একদিনের শুটিং-এই কেল্লাফতে। ধন্যবাদ শ্রী উত্তম দত্ত মহাশয়কে যিনি আমাদেরকে তার বাড়িতে শুটিং করার অনুমতি দিয়েছেন কোনো টাকা পয়সা না নিয়েই। ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয়েছে - Sony Z7P ( Rent per day 1200/- ) সম্পূর্ণ শুটিং আউটডোরে হওয়ায় আলাদা করে লাইটিং-এর কোনো প্রয়োজন হয় নি। অভিনেতারা সকলেই তাদের কাজের জন্য কোনো পরিশ্রমিক নেন নি। তাদের ধন্যবাদ। বাকী ৩০০০ টাকা লেগেছে যাতায়াত - টিফিন - মেকাপের সামগ্রী ইত্যাদিতে। খুউব শীঘ্র নন্দনে আমরা এটি প্রদর্শনী করতে চলেছি। আপনাদের আশির্বাদ কাম্য। আমরা বিশ্বাস করি ভালো সিনেমা বানাতে টাকার থেকেও বেশী প্রয়োজন শুভবুদ্ধি এবং ভালো কাজ করার আগ্রহ।

সুখী মানুষের সেরা সময় ...

সেই চোদ্দ পনের বছর বয়সের দিনগুলো, যখন ডানাটা গজিয়েছে সবে, যখন এই চেনা বৃত্ত থেকে উড়ে বেরিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে আচ্ছন্ন এই মন। যখন খবরের কাগজে সামান্য কিছু বিজ্ঞাপন। সেই সময়টাই তো সেরা সময়, আমার সময়, সেই সময়ের গান, সেই সময়ের সিনেমা, সেই সময়ের কবিতা, সেই সময়ের রিক্সাওয়ালা, দোকানদার, কন্ডাকটার, সেই সময়ের আকাশ, সেই সময়ের বৃষ্টি, সেই সময়ের গরম, সেই সময়ের আম, সেই সময়ের ইলিশ, সেই সময়ের অষ্টমী, সেই সময়ের কালিপটকা। প্রথম সমুদ্র দেখা কিশোর ছেলেটার মুখ হা হয়ে আছে। বালির উপর প্রথমবার লিখছে নিজের নয়, নিজের প্রেমিকার নাম। সেইটাই তো সেরা সময়। ফিরতে হলে সেখানেই ফিরব। একটাই কোনো ছাদের থেকে উড়ছে এ পাড়ার সবক ’টা ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ। সাদা ধবধবে কাগজে কারো হাতের লেখায় নিজের নাম। সাথে লালকালীতে করা কারুকাজ। বুকপকেটের কুঠুরীতে বহুদিন সযত্নে  তুলে রাখা ছিল সেই সম্পদ। তারপর কাগজের গুড়ো একদিন উড়ে যায় বসন্তের হাওয়ায় । আহা সে কি সময় ছিল। স্কুলের টিফিনে বারান্দা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া এরোপ্লেন। জানলা দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া কাগজের নৌকো। ছুটে এসে রাস্তায় পড়ে থাকা জলের বোতলে ফুটবলের শট। ঘরের দেওয়ালে শচীনের