বিশ্বের কথা বলতে পারব না। ভারতের কথাও জানা নেই। মোটামুটি ভাবে এই কলকাতার ছেলেদের কথা বলতে পারি। ছেলে বলতে শুধু ছেলে নয়। মেয়েরাও আরকি!! তবে তারা সব শুধু ছেলে মেয়ে নয়। কেউ কেউ বুড়োও আছেন তাতে। মানে বলতে চাইছি এই কলকাতায় বা কলকাতার আশেপাশে যারা নিজেদের মত করে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় সিনেমা বা ডকুমেন্টারি বা ঐ জাতীয় কিছু একটা করছেন বা করতে চাইছেন । হ্যাঁ তাদের কথা বলতে পারি।
না, এমনটা নয় যে তাদের সাথে বিশাল আলোচনা ফালোচনা করেছি। নাওয়া খাওয়া ভুলে তাদের নিয়ে গবেষণায় ব্যাস্ত ছিলাম এমনটাও নয়। আসলে পুরোটাই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা নির্ভর। অতিরিক্ত মশলা খেলে যেমন পেট গুড়গুড় করতে পারে, এবং সকলেরই করতে পারে সেটা অনুধাবন করতে গবেষণা লাগে না মাইরি। বেশি ভ্যান্তাড়া না মেরে পয়েন্টে আসা যাক।
পয়েন্টে আসছি। জাস্ট আর দু-লাইন ভ্যাঁজাবো। এই লেখায় আমি টেকনিকাল বিষয়ের সমস্যায় আসছি না। এটা কিছু নন-টেকনিকাল বিষয় নিয়ে আমার নিতান্তই ব্যাক্তিগত বক্তব্য।
আমাদের গল্প লিখতেই হয় এমন করে যাতে আমার চেনাশোনা এবং আয়ত্তের মধ্যে যা আছে সেখানেই গোটা ব্যাপারটা সালটে নেওয়া যায়, কিছুতেই তার বাইরে যাওয়া চলবে না। আমরা চাইলেই দিলওয়ালে দুলহনিয়ার মত নায়ক নায়িকাকে ট্রেন সিকোয়েন্স দিতে পারি না। পয়সার জোর নেই। গব্বর সিং যেভাবে পাহাড়ের ডেরায় নিজের আস্তানা জমায় আমাদের সেটা ভাবাই অন্যায়। হাস্যকর। কল্লপনার থেকেও কাল্পনিক।
গল্প লেখার সময় আমাদের বাড়ি, বন্ধুর বাড়ি, পাশের বিমল জ্যাঠুর ছাদ, খুব ভোর বেলায় স্কুলের মাঠ মোটামুটি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
একটা সিন রাখব, সেলুনে ঢুকে ভিলেন একজনের গলায় ক্ষুর বসিয়ে দেবে। সুবলের সেলুনে অনেক বলে ২০০ টাকা দিয়ে ঘন্টাখানেক সময় বার করা গেল। আমাকে পুরো শট টা ঐ নির্দিষ্ট এক ঘন্টায় সেরে ফেলতে হবে। এক ঘন্টার বেশি দেরী হলে সুবলদা নিজেই আমার গলায় ক্ষুর বসিয়ে দেবে নইলে আরো ৫০০ টাকা। তাই ভুল হলে ভুলটাকে ওভারকাম করার সময় নেই। ভুলটা বুঝতে পেরেই সেটা রেখে দিতে হয়। দাদা আমি জানি ওটা ভুল। আপনি আমায় আর নতুন কি বলবেন!!!
রাজ্যস্তরের একটা ফুটবল ম্যাচ বিশ্বাসযোগ্য করে দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সামান্য মূল ঘটনাটুকু দেখানোর জন্য যেটুকু আয়োজন সেটা করতেই আমার কালো মেয়ের গরীব বাবার মত কাছা খুলে যাওয়ার অবস্থা হয়। আপনি টালির চালের বাড়িতে মাংস পোলাও খাওয়ার মন নিয়ে এলে সেটা আপনার দোষ। গরীব লোকটি মাথা হেলানো ছাড়া আর কিই বা করতে পারে।
কারা অভিনয় করে জানেন আমাদের ছবিতে ?? অভিনেতারা!! আপনি তাহলে কিছুই জানেন না। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন পরিচিত পুরানো স্কুলের মাষ্টারমশাই এনাদের কাছেই করজোড়ে দাঁড়াতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য আমরা সবে দু-এক জায়গায় নিজের চাঁদপানা মুখখানা দেখিয়েছেন এমন এঁড়েপাকা মানুষজনকে অভিনয় করার কথা বলি। তবে তাদের প্যাঁনপ্যানানি শুনে আর দ্বিতীয়বার ডাকার ইচ্ছে হয় না। 'মশা কামড়াচ্ছে' / 'উফ কি গরম' / 'উফ কি শীত'। মাথা খেয়ে ফেলার জোর। ওদের বোঝানোই দায়, আমাদের কাজটা আন্তরিক, প্রোফাশনালিশম দেখানোর জায়গা এটা নয় ননীবাবু।
আমরা যাদের দিয়ে অভিনয় করাই তারা আমাদের কাছে আসে ২০ নিয়ে, আমরা ঘষে মেজে ৪৫ বানাই। বড় ডিরেক্টর বড় অভিনেতাকে নিয়ে তাদের কাঁধে ভর করে বেরিয়ে যেতে পারে, আমাদের সেই সুযোগ নেই। আমরা তবু ২০ কে নেওয়ার সাহস দেখাই, আপনি তো ৭৫-এর কম কাউকে অ্যালাউ করেন না। ঐ ৭৫ দের নেওয়ার বাজেট এবং তাদের পোঁদে তেল দেওয়া আমাদের কাজ নয়। আমরা মানুষের টাকা চোট করা কোম্পানীর পয়সায় সিনেমা বানাই না দাদা। টিফিনের টাকা জমিয়ে, পুজোয় বউকে নতুন শাড়ি না কিনে দিয়ে, নিজের জন্য নতুন ব্রান্ডের মোবাইল না কিনে সেই টাকায় হাজার বাঁধা টপকে সিনেমা বানাই। এইটুকু করতে অনেকে হেগে দিত।
আমরা তো সিনেমা বানাই। গল্প লিখতে পারি। সিনেমা বানানোর তাগিদ থেকেই ক্যামেরা বা এডিটিংটা শিখে নিয়েছি। কারণ সেগুলো টেকনিকাল জিনিস, শিখলে নিয়মিত অভ্যাস করলে আয়ত্তে আনা যায়। কিন্তু সংগীত ?? সে তো সাধনার জিনিস। সিনেমা করব ভেবে তো আর সংগীত শেখা শুরু করা যায় না। ক্রিকেট শিখতে চাই বলে আমি ফুটবল শিখতে বা অভ্যাস করতে পারি কিন্তু জ্যোতিষচর্চা শুরু করাটা তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আজ্ঞে হ্যাঁ আমাদের মিউজিক জোগাড় করতে হয়। কারো গীটার বাজানো বন্ধুবান্ধব থাকলে কিছুটা সুবিধা হয়।
এবার আপনি বলতেই পারেন। এত সমস্যা জেনে সিনেমা করতে আসা কেন? বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প লিখলেই তো হয়। তাহলে আপনাকে বলি, বেশ করব সিনেমা করব। অবিশ্বাসযোগ্য ভাবেই সিনেমা করব। আইফেল টাওয়ার-এর সিকোয়েন্স আমি শহীদ মিনারের নিচে শুটিং করব, আপনাকে ভাবতে বাধ্য করব যেটা দেখছেন সেটা সেটাই যেটা আমি বলতে চাইছি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন না কারন আপনার কল্পনাশক্তি দুর্বল। আমার বাড়ির পাশের মাঠে আমি পলাশীর প্রান্তরে সিরাজদৌল্লাকে শুট করব, পিছনে দালান বাড়ি দেখা যাবে, আমি তবু আপনাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করব এটা পলাশী। লোকটা সিরাজ। আপনি দেখতে পাচ্ছেন না কারন আপনার চোখ তাত্ত্বিকতায় বাঁধা। কল্পনার প্রশ্রয় সেখানে নেই।
না, এমনটা নয় যে তাদের সাথে বিশাল আলোচনা ফালোচনা করেছি। নাওয়া খাওয়া ভুলে তাদের নিয়ে গবেষণায় ব্যাস্ত ছিলাম এমনটাও নয়। আসলে পুরোটাই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা নির্ভর। অতিরিক্ত মশলা খেলে যেমন পেট গুড়গুড় করতে পারে, এবং সকলেরই করতে পারে সেটা অনুধাবন করতে গবেষণা লাগে না মাইরি। বেশি ভ্যান্তাড়া না মেরে পয়েন্টে আসা যাক।
পয়েন্টে আসছি। জাস্ট আর দু-লাইন ভ্যাঁজাবো। এই লেখায় আমি টেকনিকাল বিষয়ের সমস্যায় আসছি না। এটা কিছু নন-টেকনিকাল বিষয় নিয়ে আমার নিতান্তই ব্যাক্তিগত বক্তব্য।
১। লোকেশান সমস্যা ।।
আমাদের গল্প লিখতেই হয় এমন করে যাতে আমার চেনাশোনা এবং আয়ত্তের মধ্যে যা আছে সেখানেই গোটা ব্যাপারটা সালটে নেওয়া যায়, কিছুতেই তার বাইরে যাওয়া চলবে না। আমরা চাইলেই দিলওয়ালে দুলহনিয়ার মত নায়ক নায়িকাকে ট্রেন সিকোয়েন্স দিতে পারি না। পয়সার জোর নেই। গব্বর সিং যেভাবে পাহাড়ের ডেরায় নিজের আস্তানা জমায় আমাদের সেটা ভাবাই অন্যায়। হাস্যকর। কল্লপনার থেকেও কাল্পনিক।
গল্প লেখার সময় আমাদের বাড়ি, বন্ধুর বাড়ি, পাশের বিমল জ্যাঠুর ছাদ, খুব ভোর বেলায় স্কুলের মাঠ মোটামুটি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
একটা সিন রাখব, সেলুনে ঢুকে ভিলেন একজনের গলায় ক্ষুর বসিয়ে দেবে। সুবলের সেলুনে অনেক বলে ২০০ টাকা দিয়ে ঘন্টাখানেক সময় বার করা গেল। আমাকে পুরো শট টা ঐ নির্দিষ্ট এক ঘন্টায় সেরে ফেলতে হবে। এক ঘন্টার বেশি দেরী হলে সুবলদা নিজেই আমার গলায় ক্ষুর বসিয়ে দেবে নইলে আরো ৫০০ টাকা। তাই ভুল হলে ভুলটাকে ওভারকাম করার সময় নেই। ভুলটা বুঝতে পেরেই সেটা রেখে দিতে হয়। দাদা আমি জানি ওটা ভুল। আপনি আমায় আর নতুন কি বলবেন!!!
রাজ্যস্তরের একটা ফুটবল ম্যাচ বিশ্বাসযোগ্য করে দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সামান্য মূল ঘটনাটুকু দেখানোর জন্য যেটুকু আয়োজন সেটা করতেই আমার কালো মেয়ের গরীব বাবার মত কাছা খুলে যাওয়ার অবস্থা হয়। আপনি টালির চালের বাড়িতে মাংস পোলাও খাওয়ার মন নিয়ে এলে সেটা আপনার দোষ। গরীব লোকটি মাথা হেলানো ছাড়া আর কিই বা করতে পারে।
২। অভিনয়।।
কারা অভিনয় করে জানেন আমাদের ছবিতে ?? অভিনেতারা!! আপনি তাহলে কিছুই জানেন না। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন পরিচিত পুরানো স্কুলের মাষ্টারমশাই এনাদের কাছেই করজোড়ে দাঁড়াতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য আমরা সবে দু-এক জায়গায় নিজের চাঁদপানা মুখখানা দেখিয়েছেন এমন এঁড়েপাকা মানুষজনকে অভিনয় করার কথা বলি। তবে তাদের প্যাঁনপ্যানানি শুনে আর দ্বিতীয়বার ডাকার ইচ্ছে হয় না। 'মশা কামড়াচ্ছে' / 'উফ কি গরম' / 'উফ কি শীত'। মাথা খেয়ে ফেলার জোর। ওদের বোঝানোই দায়, আমাদের কাজটা আন্তরিক, প্রোফাশনালিশম দেখানোর জায়গা এটা নয় ননীবাবু।
আমরা যাদের দিয়ে অভিনয় করাই তারা আমাদের কাছে আসে ২০ নিয়ে, আমরা ঘষে মেজে ৪৫ বানাই। বড় ডিরেক্টর বড় অভিনেতাকে নিয়ে তাদের কাঁধে ভর করে বেরিয়ে যেতে পারে, আমাদের সেই সুযোগ নেই। আমরা তবু ২০ কে নেওয়ার সাহস দেখাই, আপনি তো ৭৫-এর কম কাউকে অ্যালাউ করেন না। ঐ ৭৫ দের নেওয়ার বাজেট এবং তাদের পোঁদে তেল দেওয়া আমাদের কাজ নয়। আমরা মানুষের টাকা চোট করা কোম্পানীর পয়সায় সিনেমা বানাই না দাদা। টিফিনের টাকা জমিয়ে, পুজোয় বউকে নতুন শাড়ি না কিনে দিয়ে, নিজের জন্য নতুন ব্রান্ডের মোবাইল না কিনে সেই টাকায় হাজার বাঁধা টপকে সিনেমা বানাই। এইটুকু করতে অনেকে হেগে দিত।
৩। মিউজিক ।।
আমরা তো সিনেমা বানাই। গল্প লিখতে পারি। সিনেমা বানানোর তাগিদ থেকেই ক্যামেরা বা এডিটিংটা শিখে নিয়েছি। কারণ সেগুলো টেকনিকাল জিনিস, শিখলে নিয়মিত অভ্যাস করলে আয়ত্তে আনা যায়। কিন্তু সংগীত ?? সে তো সাধনার জিনিস। সিনেমা করব ভেবে তো আর সংগীত শেখা শুরু করা যায় না। ক্রিকেট শিখতে চাই বলে আমি ফুটবল শিখতে বা অভ্যাস করতে পারি কিন্তু জ্যোতিষচর্চা শুরু করাটা তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আজ্ঞে হ্যাঁ আমাদের মিউজিক জোগাড় করতে হয়। কারো গীটার বাজানো বন্ধুবান্ধব থাকলে কিছুটা সুবিধা হয়।
শেষ কথা
এবার আপনি বলতেই পারেন। এত সমস্যা জেনে সিনেমা করতে আসা কেন? বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প লিখলেই তো হয়। তাহলে আপনাকে বলি, বেশ করব সিনেমা করব। অবিশ্বাসযোগ্য ভাবেই সিনেমা করব। আইফেল টাওয়ার-এর সিকোয়েন্স আমি শহীদ মিনারের নিচে শুটিং করব, আপনাকে ভাবতে বাধ্য করব যেটা দেখছেন সেটা সেটাই যেটা আমি বলতে চাইছি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন না কারন আপনার কল্পনাশক্তি দুর্বল। আমার বাড়ির পাশের মাঠে আমি পলাশীর প্রান্তরে সিরাজদৌল্লাকে শুট করব, পিছনে দালান বাড়ি দেখা যাবে, আমি তবু আপনাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করব এটা পলাশী। লোকটা সিরাজ। আপনি দেখতে পাচ্ছেন না কারন আপনার চোখ তাত্ত্বিকতায় বাঁধা। কল্পনার প্রশ্রয় সেখানে নেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন