সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বেরুবেরু

মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ


এখন সময়, সময় পেলেই বেড়িয়ে আসার। কাছে পিঠে বা দূঁরে কোথাও। দূঁরের হদিশ পরে কখনও হবে। আজ বলব নিজের রাজ্যের মধ্যেই এমন এক স্থানের কথা যার ঐতাহিসক গুরুত্ব আন্তর্জাতিক মানের।

ইতিহাস 
মুর্শিদাবাদের ইতিহাস বলতেই আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম গৌড় রাজ্যের রাজধানী বহরমপুর থেকে মাত্র আট কিমি দূরে কর্ণসুবর্ণ নগরী, আবার এখানেই বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতার সূর্যােস্তর সূচনা হয় ১৭৫৭ সালে। ১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের অর্থাৎ সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা হয় এখানেই। ফকির, ফরাজী, নীল, সাওতাল, তেভাগা প্রভৃতি কৃষক-স্বাধীনতা-অসহযোগ-ভারত ছাড়ো আন্দোলন-সহ সশস্ত্র বিপ্লবীদের গোপন পদচারণায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠা মুর্শিদাবাদের মাটি।
হাজারদুয়ারি প্রাসাদমুর্শিদাবাদ শহরে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। ভাগীরথীর পূর্বতীরে অনেকটা জায়গা নিয়ে কিল্লা নিজামত, প্রাক্তন নবাবদের বাসস্থান ও কার্যালয়। কিল্লা নিজামতের উত্তর অংশে এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। এই তিন তলা বিশাল অট্টালিকা বড়কুঠি নামে পরিচিত। প্রাসাদটি নির্মাণ করেন নাজিম হুমায়ুন জা (১৬২৪-১৮৩৮)। প্রাসাদের নির্মাণ কাল ১৮২৯ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ। জেনারেল ডানকান ম্যাকলিয়ড-এর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ইতালীয় স্থাপত্যের এই বিশাল প্রাসাদটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ১৩০, ৬০ ও সাড়ে ২৪ মিটার। প্রাসাদে এক হাজার দরজা থাকায় এর নাম হাজারদুয়ারি। অবশ্য এই হাজার দরজার মধ্যে বেশ কিছু নকল দরজাও রয়েছে।
প্রাসাদের নানা কক্ষে বিশেষ দর্শনীয় পৃথিবীর বিখ্যাত শিল্পীদের আকা নানা আকার ও বর্ণের ছবি, কালানুক্রমিক বিভিন্ন নবাবদের চিত্র, নানা বিষয়ে সংগৃহীত মূল্যবান তৈজসপত্র ও বিলাসদ্রব্যাদি, গ্রন্থাগার এবং অস্ত্রাগার। গ্রন্থাগারে বহু বিচিত্র ও বিস্ময়কর কোরানের পুথি, আইন-ই-আকবরি আকবরনামা, শাহনামা সমেত বহু মূল্যবান পুথিও এখানে রক্ষিত আছে। আকবরনামার পুথিটি আবুল ফজলের স্বহস্তলিখিত। তবে গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়। দরবার কক্ষটি সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয়। এই কক্ষের অভ্যন্তরে একটি বিশাল ঝাড়বাতি উল্লেখযোগ্য।
হাজারদুয়ারি ছাড়াও কিল্লা নিজামতের মধ্যে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। কেল্লার দক্ষিণপ্রান্তে দক্ষিণ দরওয়াজা, পূর্বতন প্রবেশদ্বার। কেল্লায় প্রবেশের আরও দুটি প্রধান প্রবেশদ্বার, পূর্ব দিকে চক দরওয়াজা ও উত্তর দিকে ইমামবাড়া দরওয়াজা। এখন চক দরওয়াজা প্রধান প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণ পথ। ডক দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণ দিকে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা নির্মিত নতুন প্রাসাদ ওয়াসিফ মিঞ্জল। এখানেও নবাবি আমলের কিছু দর্শনীয় বস্তু রয়েছে।
বাচ্চাওয়ালি তোপমদিনার কাছেই বাচ্চাওয়ালি তোপ। বিশেষজ্ঞেদর মতে, এই কামানটি সম্ভবত, ১৩-১৪ শতকে গৌড়ের কোনও সুলতানি আমলের।হাজারদুয়ারি থেকে এক কিমি দূরে শ্যামপুর-হায়দারগঞ্জ অঞ্চলে মুর্শিদকুলি খার কন্যা আজিমউেন্নসার সমাধি। প্রাসাদ থেকে দেড় কিমি দূরে জাফরাগঞ্জ। এখানে রাস্তার পূর্ব দিকে মিরজাফর ও অন্যান্য নবাব নাজিমদের সমাধিস্থল জাফরাগঞ্জ সমাধি ক্ষেত্র।
নশিপুর রাজপ্রাসাদওই রাস্তার পূর্ব দিকে নশিপুর রাজপ্রাসাদ। নশিপুরের রাজা কীর্তিচাদ বাহাদুর উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাশ্চাত্য স্থাপত্য রীতিতে এই বৃহৎ প্রাসাদ নির্মাণ করেন।প্রাসাদ সংলগ্ন ঠাকুর বাড়িতে সুউচ্চ পচিশ চূড়া বিশিষ্ট রামচন্দ্র মন্দির। প্রাসাদ এখন জীর্ণ ও ধ্বংসপ্রায়।
কাঠগোলা
নশিপুরের এক কিমি দক্ষিণপূর্বে কাঠগোলা। জিয়াগেঞ্জর ধনকুবের রাজা ধনপৎ সিংহ দুগার ও লক্ষ্মীপৎ সিং দুগার ১৮৭৩ সালে এখানে একটি সুরম্য প্রাসাদ ও আদিনাথের বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
কাঠগোলার এক কিমি দক্ষিণে রেলপথের পূর্ব দিকে কুমারপুর অঞ্চলে অসমাপ্ত ‘ফুটি মসজিদ’ অবিস্থত। মুর্শিদকুলি দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খা (১৭৩৯-৪০) মসজিদটি নির্মাণ করেন। অসমাপ্ত হলেও স্থাপত্যের দিক দিয়ে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মসজিদ।
এছাড়াও আরোমুর্শিদাবাদ রেলেস্টশন থেকে দেড় কিমি উত্তর-পূর্বে বহরমপুর-লালগোলা রাজ্য সড়কের পাশে বিশাল ‘কাটরা মসজিদ’। নবাব মুর্শিদকুলি খা ১৭২৩ সালে ৫টি সুবৃহৎ গম্বুজ ও দুটি উচ্চ মিনার বিশিষ্ট বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের সম্মুখে বিরাট চত্বরে উঠবার ঁসিড়ির নিচে নবাব মুর্শিদকুলি কার অনাড়ম্বর সমাধি।
কাটরা থেকে এক কিমি দক্ষিণ-পূর্বে গোবরা নালার তীরে তোপখানা। মুর্শিদাবাদের প্রতিরক্ষার জন্য এখানে যে অস্ত্রাগার ছিল, তারই নিদর্শন জাহানকোষা (জগজ্জয়ী) কামান। সাড়ে ১৭ ফুট লম্বা এই কামানটি সুবেদার ইসলাম খার আমলে (১৬০৮-১৩) ঢাকার কারিগর জনাদ্দর্ন কর্মকার নির্মাণ করেন।
লালবাগ কোর্ট থেকে এক কিমি দক্ষিণে লালবাগ-বহরমপুর সড়কের কিছু পূর্বে মতিঝিল। আলিবর্র্দি খার জ্যেষ্ঠ জামাতা ঘসেটি বেগমের (মেহেরুন্নেসা) স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খা এই অতি সুদৃশ্য ঝিল এবং তার তীরে ‘সাংহী দালান’ নামে এক প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এখন তা অবলুপ্ত। নওয়াজেস খা (১৭৫০-৫১) ‘কালা মসজিদ’ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা মতিঝিল মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদ চত্বরে নওয়াজেস মহম্মদ খা ও সিরাজের কনিষ্ঠ ভ্রাতা এক্রামউদ্দৌলার সমাধি রয়েছে।
যাতায়াতকলকাতা থেকে বহরমপুর ১৯০ কিমি পথ।– সড়ক পথে কলকাতা এসপ্ল্যানেড থেকে সরকারি বা বেসরকারি বাসে বহরমপুর।– রেলপথে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে মুর্শিদাবাদ স্টেশন। ( শিয়ালদহ থেকে রাত ১১টা নাগাদ লালগোলা প্যাসেঞ্জার করে মুর্শিদাবাদ যাওয়াই সব থেকে উপযোগী। ভোর ৪টে৩০ নাগাদ আপনি পৌঁছে যাবেন মুর্শিদাবাদে)– মুর্শিদাবাদ শহরে পৌছে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।
আস্তানা–বহরমপুরে নামী-দামি বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও সরকারি ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে।– মুর্শিদাবাদেও হাজারদুয়ারি লাগোয়া ভাগীরথীর তীরে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।– এখানে রয়েছে যুব আবাসও। যুব আবাসে থাকার জন্য আগাম ঘর বুকিং করতে হবে।– সরকারি লজে বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুন:
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম
৩৩/২ বি বা দী বাগ (পূর্ব)
কলকাতা-৭০০ ০০১
ফোন: (০৩৩) ২২৪৩ ৭২৬০, (০৩৩) ২২১০ ৩১৯৯
মোবাইল: ৯৮৭৪০ ২৬৯১৪, ৯৮৩৬৭ ৬৯১৯৬

– যুব আবাস ছাড়া সব ক্ষেত্রেই এসি-নন এসি ঘর রয়েছে। ডর্মিটারির সুবিধাও মিলবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এরপরেও কি আপনি বলবেন 'গর্ভপাত নিপাত যাক !!!'

এতদিন গর্ভপাতকে আপনারা নিশ্চয় অন্যায় ভেবে এসেছেন?? সেটাই তো ভাবা উচিত?? আসুন এবার আমি আপনাকে একটু অন্যরকম ভাবে জিনিসটা দেখানোর চেষ্টা করি। লজিকটা বোঝার চেষ্টা করুন এবং যুক্তি নির্ভর বিরোধিতা করুন। বেকার নাকে কান্না কপচাবেন না প্লীজ। আসলে আপনারা বড় কুঁচুটে। সব সময় একপক্ষ বা এক দিক দেখেই বিচার করে ফেলেন। বড্ড বেশি ইমোশোনাল ফেকলু। একটু দুঃখু দেখলেই চোখ টশটশ করে। সবটাই ন্যাকামো বলছি না। কিন্তু যে পাপ নিজে দিনে সাঁইত্রিশ বার করেন সেটাই অন্য কেউ করলে আহা! কি নিষ্ঠুর বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। 'রাস্তায় মানুষটা পরে রয়েছে, আহা কেউ এসে একটু সাহায্য করছে না কেন' বলে টিভিতে বাইট দিতে পারেন কিন্তু নিজে এক পা নড়তে পারেন না। যাই হোক, মোদ্দা কথা হল, অনিচ্ছাকৃত শিশু গর্ভে এসে গেলে অনেকেই গর্ভপাত করে থাকেন। সোজা বাংলায় যাকে Abortion বলে। অনেককেই দেখেছি এই গর্ভপাত নিয়ে খুব আঁকু-পাকু করে থাকেন। বলা যায় না, কিছুদিন পর তারা এটাও বলতে পারেন, কনডোম পরে সেক্স করা মানে একটি 'প্রায় হয়ে যাওয়া শিশুর হত্যা' ইত্যাদি। যে শিশুকে বাবা-মা জন্ম দিতে চাইছে না, তাকে আইনের ভয় দেখিয়ে জন্ম দেওয়া ক

৫ হাজার টাকার কমেও আমরা বানিয়ে ফেলেছি ২৫ মিনিটের একটি আস্ত সিনেমা । অবিশ্বাস্য বইকি !!

যেখানে বড় বড় পরিচালকেরা কোটি কোটি টাকা ছাড়া কিছু ভাবতে পারছে না, সেখানে শুধু ইচ্ছাশক্তি সম্বল করে এবং মাত্র ৫ হাজার টাকার কমেও আমরা বানিয়ে ফেলেছি ২৫ মিনিটের একটি আস্ত সিনেমা। মাত্র একদিনের শুটিং-এই কেল্লাফতে। ধন্যবাদ শ্রী উত্তম দত্ত মহাশয়কে যিনি আমাদেরকে তার বাড়িতে শুটিং করার অনুমতি দিয়েছেন কোনো টাকা পয়সা না নিয়েই। ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয়েছে - Sony Z7P ( Rent per day 1200/- ) সম্পূর্ণ শুটিং আউটডোরে হওয়ায় আলাদা করে লাইটিং-এর কোনো প্রয়োজন হয় নি। অভিনেতারা সকলেই তাদের কাজের জন্য কোনো পরিশ্রমিক নেন নি। তাদের ধন্যবাদ। বাকী ৩০০০ টাকা লেগেছে যাতায়াত - টিফিন - মেকাপের সামগ্রী ইত্যাদিতে। খুউব শীঘ্র নন্দনে আমরা এটি প্রদর্শনী করতে চলেছি। আপনাদের আশির্বাদ কাম্য। আমরা বিশ্বাস করি ভালো সিনেমা বানাতে টাকার থেকেও বেশী প্রয়োজন শুভবুদ্ধি এবং ভালো কাজ করার আগ্রহ।

সুখী মানুষের সেরা সময় ...

সেই চোদ্দ পনের বছর বয়সের দিনগুলো, যখন ডানাটা গজিয়েছে সবে, যখন এই চেনা বৃত্ত থেকে উড়ে বেরিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে আচ্ছন্ন এই মন। যখন খবরের কাগজে সামান্য কিছু বিজ্ঞাপন। সেই সময়টাই তো সেরা সময়, আমার সময়, সেই সময়ের গান, সেই সময়ের সিনেমা, সেই সময়ের কবিতা, সেই সময়ের রিক্সাওয়ালা, দোকানদার, কন্ডাকটার, সেই সময়ের আকাশ, সেই সময়ের বৃষ্টি, সেই সময়ের গরম, সেই সময়ের আম, সেই সময়ের ইলিশ, সেই সময়ের অষ্টমী, সেই সময়ের কালিপটকা। প্রথম সমুদ্র দেখা কিশোর ছেলেটার মুখ হা হয়ে আছে। বালির উপর প্রথমবার লিখছে নিজের নয়, নিজের প্রেমিকার নাম। সেইটাই তো সেরা সময়। ফিরতে হলে সেখানেই ফিরব। একটাই কোনো ছাদের থেকে উড়ছে এ পাড়ার সবক ’টা ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ। সাদা ধবধবে কাগজে কারো হাতের লেখায় নিজের নাম। সাথে লালকালীতে করা কারুকাজ। বুকপকেটের কুঠুরীতে বহুদিন সযত্নে  তুলে রাখা ছিল সেই সম্পদ। তারপর কাগজের গুড়ো একদিন উড়ে যায় বসন্তের হাওয়ায় । আহা সে কি সময় ছিল। স্কুলের টিফিনে বারান্দা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া এরোপ্লেন। জানলা দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া কাগজের নৌকো। ছুটে এসে রাস্তায় পড়ে থাকা জলের বোতলে ফুটবলের শট। ঘরের দেওয়ালে শচীনের